চিরতা লিভার ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়

 চিরতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Swertia chirata) আমাদের দেশে সুপরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি তিক্ত স্বাদের জন্য বিখ্যাত হলেও, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অসাধারণ। বিশেষ করে লিভার ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে চিরতার ভূমিকা প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃত।চিরতা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছটির গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার। গাছের পাতা কম-বেশি ১০ সে.মি. দীর্ঘ। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। ফুল বৃন্তহীন, জোড়ায় জোড়ায় বিপরীতমুখী হয়ে ফোটে। ফুল হালকা সবুজের সঙ্গে গোলাপি মেশানো। প্রত্যেক পাপড়ি লতিতে এক জোড়া সবুজ গ্রন্থি থাকে। ফল ৬ মি.মি. কিংবা তারও বেশি লম্বা এবং ডিম্বাকৃতি।       

চিরতা
চিরতা
                                                                                                                                                                             
সাধারণত চিরতা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সে পানি পান করা হয়। প্রাচীন ভারতে এটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মানবদেহে এই চিরতার রয়েছে দারুণ কিছু কার্যকারিতা।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                

জেনে নেয়া যাক চিরতার উপকারিতা:

১. চিরতা শরীরের বিভিন্ন অংশের জ্বালাপোড়া দূর করে। জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যানসার, পাইলস, চর্মরোগ ও অন্ত্রের কৃমি দূর করে। একইসঙ্গে চিরতা লিভার ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষুধা উদ্দীপক এবং হজমে সহায়তা করে।

২. চিরতা রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে ও রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়রিয়া ও জন্ডিস নিরাময়ে এ ভেষজ উপাদানটি চোখ, হার্ট এবং অ্যাজমা রোগীদের জন্যও সমান উপকারী।

৩. চিরতার তিক্ততা মুখের লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসরণ ও পাচক রস উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে অতিরিক্ত তেষ্টাবোধ ও মাংসপেশির স্ফীতি রোধ হয়। তবে মনে রাখা দরকার, দিনে একগ্লাসের বেশি চিরতার পানি খাওয়া ঠিক না।

৪. চিরতার পানি ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে তোলে ও ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে।

৫. ত্বকের যে কোনো সমস্যা যেমন- ব্রণ, ইনফেকশন, জ্বালাপোড়া, দাগ, চুলকানি, লালচে ভাব, পোড়াদাগ দূর করতে চিরতার পানি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ত্বকে ফুসকুড়ি রয়েছে তারা গোসলের পানিতে চিরতার রস ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও একইসঙ্গে চিরতা লিভার ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষুধা উদ্দীপক এবং হজমে সহায়তা করে।

লিভারের জন্য উপকারিতা

  1. চিরতা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

  2. লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

  3. হেপাটাইটিস, জন্ডিসসহ লিভারজনিত সমস্যায় উপকারী বলে আয়ুর্বেদে উল্লেখ আছে।

  4. নিয়মিত সীমিত মাত্রায় চিরতার পানি খেলে লিভার সুস্থ ও কার্যক্ষম থাকে।

পাকস্থলীর জন্য উপকারিতা

  1. চিরতা হজম শক্তি বাড়াতে কার্যকর।

  2. খাবার হজমে সহায়তা করে এবং অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক কমায়।

  3. এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, ফলে অপুষ্টি দূর করতে সাহায্য করে।

  4. পাকস্থলীর ইনফেকশন ও ক্র্যাম্প কমাতেও ভূমিকা রাখে।

চিরতা সেবনের পদ্ধতি

  1. সাধারণত রাতে এক গ্লাস পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি খাওয়া হয়।

  2. গরম পানিতে চিরতা ডুবিয়ে রেখে চা’র মতো পান করলেও একই উপকার পাওয়া যায়।                                             

সতর্কতা

  • অতিরিক্ত চিরতা খেলে ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত অম্লতার সমস্যা হতে পারে।

  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়।

  • দীর্ঘদিন নিয়মিত সেবনের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার

চিরতা হলো প্রকৃতির এক অনন্য ভেষজ, যা লিভার ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে এটি কোনো ওষুধের বিকল্প নয়। সঠিক মাত্রায় ও নিয়ম মেনে সেবন করলে চিরতা হতে পারে স্বাস্থ্য রক্ষার কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপায়।

Sourov Store

"Ritu IT | Ritu Vlogs: Where tech meets vlogs in perfect harmony! Join Ritu on a dynamic exploration of information technology and captivating daily adventures. Subscribe now for a seamless fusion of IT insights and entertaining vlogs!"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন